বোতল ভর্তি ভালোবাসা

বৃষ্টি ও প্রেম (সেপ্টেম্বর ২০২০)

Zarif
  • 0
  • ৫০
১।
কয়েকদিন ধরেই নীলার অস্বস্তি লাগছে। বিয়ের পরে একটা সময়ে অনেকেই একটু উদাসীন থাকে। সাদমানের ক্ষেত্রে কি এমনটাই হচ্ছে? আজ সকালে নীলা অনেকদিন পরে টিপ দিল। শাড়ি পরে চমকে দিতে চাইলো। কিন্তু সাদমানের কোনো খেয়ালই নেই। কোনো রকমে নাস্তা করে বেরিয়ে পড়লো। বললো ফিরতে দেরি হতে পারে।ধুর! এভাবে সকাল সকাল সেজেগুজে বসে থাকতে এখন তার বিরক্ত লাগছে। চাও ঠান্ডা হয়ে গেলো। হলে হোক। আজ সবকিছুর উপরই নীলার অভিমান।এমন সময় কেউ বেল বাজালো। সাদমান কি কিছু ফেলে গেছে? দরজা খুলতেই দেখে এক বুড়ি।
-মা, বৃষ্টির পানি কিনবা? বোতল ভর্তি বৃষ্টির পানি।একদম ফেরেশ। কোনো ভেজাল নাই।
ছোকরা টাইপের ছেলে আসলে নিশ্চিতভাবেই নীলা কড়া কথা শোনাতো। তোর বৃষ্টির পানি তুই রাখ। মরুভূমিতে গিয়ে বিক্রি কর। এখানে কি? সে বললো
-না চাচী। আমার লাগবে না। আপনি যেতে পারেন।
-মা, তোমাকে আমার মাইয়ার মত দেখতে। কম দামে দিমু।
-দামের ব্যাপার না। আমি কিনবো না। বৃষ্টির পানি নিয়ে আমি কি করবো?
বুড়ির মুখে হাসি ফুটলো। সে বলল
-এইডা মা কোনো সাধারণ পানি না। এর গুণাগুণ আছে। শুনলে অবাক হইয়া যাইবা। আমি পেটের টানে পইড়া কম দামে দিতাসি।
নীলার একটু মায়া লাগলো। বুড়িটা খেতে পারছে না! বরাবরই নীলার মন নরম।
-কি গুণাগুণ, শুনি!
-তোমার বর কি ঘরে আছে?
-কেন বলুন তো?
-ওর লাইগাই ঐ পানি। তুমি যদি তোমার জামাইরে সন্দেহ করো আর ঐ সন্দেহ যদি ভুল হয় তাইলে এই পানি কালা হইয়া যাইবো। একটু একটু কইরা। আর যদি সন্দেহ ঠিক হয় তাইলে পানির কোনো পরিবর্তন হইবো না।
-তুমি কি যাদুকরী ডাইনী?
-না মা, আমার দাদী আমারে এই বিদ্যা শিখাইছিলো।তুমি বিশ্বাস করতে পারো। তবে পানি যদি কুচকুচে কালো হইয়া যায় তবে তোমার সংসার আর টিকবো না।
নীলা এবার একটু ভয় পেলো। তারপরও ওর সন্দেহ গুলো ঠিক কিনা তা দেখতে চায় সে। সন্দেহ নিয়ে জীবন চালানো খুব কঠিন।

২।
সাদমান ফোন ধরছে না। অথচ এখন লাঞ্চব্রেক।ফোন ধরলে কি হয়? এসময়টা নীলা একা থাকে। আট বছরের মাইশা ডে-শিফটে পড়ে বলে দুপুরটায় ঘরটাকে বিরানভূমি মনে হয়। সাদমান কি করছে এখন? সুন্দরী কলিগ পেয়ে বউকে ভুলে গেছে? বোতলের পানির রঙ একটু কালো হলো বলে নীলার নজরে পড়ে গেলো চট করে। তার মানে ওর সন্দেহটা ভুল? ছি! ছি! সাদমানকে নিয়ে কি ভাবছিলো সে!
এক ঘণ্টা ধরে সাদমান ফোন নিয়ে পড়ে আছে। রাত একটায় নিশ্চয় অফিসিয়াল কাজ নিয়ে কথা বলবে না! কি করছে ও? একবার ভাবল জিজ্ঞেস করবে। কিন্তু কি মনে করে আর করলো না। সাদমান কি আর এত রাতে মেয়েদের সাথে কথা বলবে? তারপরও নিজেকে বোঝাতে পারলো না। সকালে উঠে দেখে বোতলের পানি আরো কালো হয়ে গেছে।নাহ! এভাবে আর চলতে পারেনা। নীলা আর সন্দেহ করবে না বলে ঠিক করলো। নাহলে যে সংসার ভেঙ্গে যাবে!
আজ ওদের বিবাহ বার্ষিকী। আজ রাতে ওরা একসাথে সময় কাটাবে। মোমবাতি জ্বালাবে। নীলাকে আজ বড্ড খুশি লাগছে।এখন কি পূর্ণিমা? তাহলে ছাদেও যাওয়া যেত। এমন দিনের কথা কিশোরী অবস্থায় কত ভেবেছে! আজ নিজেকে সত্যিই এভাবে অপেক্ষা করতে দেখে নিজেরই লজ্জা লাগছে! রাত প্রায় ১০ টা বাজলো বলে। সাদমান নিশ্চয়ই উপহার কিনতে গেছে। নাহলে এত দেরি হওয়ার কথা না! তখন সাদমান ফোন করে বলল গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। গ্যারেজে নিতে হবে। সে রাতে আর ও ফিরলো না।
নীলার মনে সন্দেহের ঘনঘটা। সে কিভাবে নিজেকে বোঝাবে বুঝতে পারলো না। নতুন গাড়ি কিভাবে নষ্ট হবে? আর হলেও বা কি? গাড়ি গ্যারেজে দিয়ে বাসায় ফেরা যেতো! সাদমান কি তাহলে……?
এমন সময় বোতলটা কুচকুচে কালো হয়ে গেলো। সাদমানকে সে খুব ভালোবাসে! সংসার ভেঙ্গে যাবে এটা সে মেনে নিতে পারছে না! কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামলেই কি প্রকৃতি শান্ত হবে?
বোতলের পানিগুলো সে ফেলে দিলো।

৩।
তিন মাস পরে হঠাৎ এক দুপুরে বুড়িটা আবার এলো।
-মা, বোতলটা ফেরত দাও। আমার কাজ শেষ!
-চাচী, তুমি না বলেছিলে পানি কুচকুচে কালো হলে সংসার ভেঙ্গে যাবে? কিছু হলো না তো!
-তুমি কি মা সংসার ভাঙতে চাও?
-না, কক্ষনো না। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না কি হলো।
-ভালোবাসা আর সন্দেহ একসাথে থাকতে পারবো না। সন্দেহ বাড়লে ভালোবাসা কইমা যাইব।যখনই তুমি পানি ফালায় দিলা তখনই তোমার সন্দেহ চইল্যা গেল। এখন খালি ভালোবাসা আর ভালোবাসা । বুঝলা?
নীলা খুশিতে কেঁদে দিলো। সে আর কখনো সে আর কক্ষনো সন্দেহ করবে না।
বুড়িটা বলল
-মা, একটু পানি দিবা?
নীলা ফিরে এসে দেখে বুড়ি চলে গেছে! তার মায়া লাগলো। বুড়িটা তার কত উপকার করলো! কিন্তু এক গ্লাস পানিও সে খাওয়াতে পারলো না!

৪।
তোমার কাজ হয়ে গেছে!
বুড়ির কথা শুনে সাদমানের মুখে হাসি ফুটলো। এই হাসি অপবিত্র, কালো অন্ধকারে ঢাকা।
নীলা অবশ্য এই অংশটুকু জানে না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ মাইদুল সরকার নীলারা এমন অন্ধকারেই থেকে যায়।
ভালো লাগেনি ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০
ফয়জুল মহী অনুপম প্রকাশ । l
ভালো লাগেনি ১ সেপ্টেম্বর, ২০২০
অনেক অনেক ধন্যবাদ... আপনার মন্তব্য আমাকে ভবিষ্যতে অণুপ্রেরণা দিবে।
ভালো লাগেনি ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

গল্পটি দাম্পত্য জীবনের সন্দেহ নিয়ে লিখা। ভালোবাসা দিয়ে কি সন্দেহ দূর করা যাবে? নাকি সব মিথ্যা? চলুন দেখে আসা যাক।

২৫ এপ্রিল - ২০২০ গল্প/কবিতা: ৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪